তেপান্তর রিপোর্ট: ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে ইজারার নিয়ম–নীতির তোয়াক্কা না করে মেঘনা নদীতে ফ্রিস্টাইলে চলছে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন। সুযোগ বুঝে ড্রেজার লাগিয়ে মেঘনা চরের ফসলি জমি পর্যন্ত কেটে ফেলা হচ্ছে। এতে করে চরে ব্যাপক ভাঙনের সৃষ্টি হবার পাশাপাশি তীরবর্তী চরলালপুর গ্রাম হুমকির মুখে পড়েছে বলে এলাকাবাসী অভিযোগ করছেন। আশুগঞ্জের লালপুরের মেঘনা নদীতে চলছে এই হড়িলুট।কিন্তু এবিষয়ে অনিয়মের প্রমান পাওয়া ও একাধিক পত্র–পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হওয়ার পরও টনক নড়ছেনা সংশ্লিষ্টদের। অবৈধ ভাবে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলননের পরও সংশ্লিষ্টরা ঠিক কি কারনে কোন ব্যবস্তা নেননি এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হয় আশুগঞ্জের এসিল্যন্ড কাজী তাহমিনা সারমিনের সাথে। তিনি বলেন, বিষয়টি তার জানা নেই, এবিষয়ে তিনি কোন চিঠিও পাননি।আশুগঞ্জের ইউএনও অরবিন্দ বিশ্বাসের বক্তব্য জানতে তার মোবাইল ফোনে একাধিক বার কল করেও কোন সাড়া পাওয়া যায়নি।এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে ভুক্তভোগী কৃষকরা আদালতের শরণাপন্ন হলে বিষয়টি সরেজমিনে দেখতে অ্যাডভোকেট কমিশন গঠন করেন আদালত। কমিশনের অ্যাডভোকেট রুহুল বাসার খান জসীম সরেজমিনে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে অনিয়মের সত্যতা পেয়েছেন, তবে সেই সত্যতার রিপোর্ট তিনি এখনো আদালতে জমা দেননি। ফলে বর্তমানেও অনিয়মতান্ত্রিক ভাবে বালু উত্তোলন অব্যাহত আছে। লালপুর চরের দক্ষিণ মাথায় ড্রেজার লাগিয়ে চরটিকে গিলে ফেলার অপচেষ্টা করা হচ্ছে বলে গ্রামবাসীর অভিযোগ। অবস্থাটা এমন, “দেখার যেন কেউ নেই”।
জানা যায়, সম্প্রতি জেলার আশুগঞ্জ উপজেলার চরলালপুর ও নবীনগর উপজেলার চর কেদারখোলা দুটি বালু মহাল ইজারা দেয় জেলা প্রশাসন। দুটি বালু মহালেরই ইজারা পেয়েছেন মেসার্স মৌসুমী ড্রেজিং সার্ভিস। যার স্বত্বাধিকারী পার্শ্ববর্তী ভৈরব উপজেলার প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা মোশারফ হোসেন মিন্টু।
সম্প্রতি চরলালপুর বালু মহালের ইজারামূল্য জমা দিয়ে বালু উত্তোলন শুরু করে ইজারাদার। কিন্তু দুই-এক দিন যেতে না যেতেই ইজারায় উল্লিখিত এলাকা থেকে তারা বালু উত্তোলন না করে উত্তোলন খরচ কমাতে এবং অতিরিক্ত বালু পাবার লোভে নদীর চর ঘেঁষে বালু উত্তোলন শুরু করে ইজারাদার। এমনকি সুযোগ বুঝে ড্রেজার লাগিয়ে তারা মেঘনা চরের ফসলি জমির মাটি কেটে নিতে থাকে। এতে করে সংশ্লিষ্ট জমির বন্দোবস্ত পাওয়া ভূমিহীন কৃষকদের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। এছাড়া ড্রেজার দিয়ে মাটি কেটে ফেলার কারণে চরে ব্যাপক ভাঙনের সৃষ্টি হয়। এতে নদীর তীরবর্তী চরলালপুর গ্রামের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা দেখা দেয় গ্রামবাসীর মনে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার লালপুর বাজারের কাছে মেঘনার চর ঘেঁষে একাধিক ড্রেজারের সাহায্যে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। ইতোমধ্যেই চরের বিরাট অংশের ফসলি জমি কেটে ফেলা হয়েছে। কাটা অংশে সৃষ্টি হয়েছে ব্যাপক ভাঙন।
এভাবে চর ঘেঁষে বালু উত্তোলন করতে থাকলে খুব অল্প সময়েই চরের একটি অংশ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে তীরবর্তী গ্রাম হুমকির মুখে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, চরের এসব জমি নিয়মতান্ত্রিকভাবে সরকার ভূমিহীনদের নামে বন্দোবস্ত দিয়েছে। প্রতিবছর ধান, গম, কাউন, মিষ্টি আলো, তরমুজ ও সরিষাসহ নানান জাতের ফসল হতো এসব জমিতে।
ভূমিহীন চাষি ও গ্রামবাসীরা জানান, ইজারা পেয়ে বালু উত্তোলন শুরু করার পর মাত্র দুই-এক দিন তাদের সীমানায় বালু উত্তোলন করা হয়। এরপর থেকেই তারা চর ঘেঁষে বালু উত্তোলন করতে থাকে এবং রাতবিরাতে ফসলি জমির মাটি কেটে নিয়ে যায়। গ্রামবাসী চরে উপস্থিত হলে ড্রেজার ভাসিয়ে দূরে নিয়ে যাওয়া হয়। চর ঘেঁষে মাটি কাটতে নিষেধ করায় ইজারাদারের পক্ষ থেকে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করে দেওয়ার হুমকি দেয়া হচ্ছে বলে ভূমিহীন কৃষকদের অভিযোগ।
এলাকাবাসী জানান, গত দুই-তিন দিন সময়ে তাদের প্রায় ৫ কানী (১৫০ শতাংশ) জমির মাটি কেটে নদীতে মিলিয়ে ফেলা হয়েছে। যেসব জমিতে প্রতিবছর ধান, গম, কাউন, মিষ্টি আলো, তরমুজ ও সরিষাসহ নানান জাতের ফসল উত্পাদন হতো। এসব জমির এখন আর অস্থিত্ব নেই। এসব জমির উপর তাদের জীবিকা নির্ভর ছিল এবং বর্ষা মৌসুম শেষে এখনই জমিতে ফসল ফলানোর স্বপ্ন দেখছিল তারা। অবিলম্বে চর ঘেঁষে মাটি কাটা বন্ধ করাসহ জমির ক্ষতিপূরণ দাবি করছেন কৃষকরা। এ ব্যাপারে আদালত গঠিত কমিশনের অ্যাডভোকেট রুহুল বাসার খান জসীম খান কিছুদিন আগে বলেছিলেন, বালু মহালের সীমানা অতিক্রম করে ইজারাদার চরের ফসলি জমির মাটি কেটে নিয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে প্রতীয়মান হয়েছে। আমি সরেজমিনে যা দেখেছি তাই প্রতিবেদনে উল্লেখ করব। যদিও তিনি এখন পর্যন্ত সেই প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করেননি। ইউনিয়নের উপ-সহকারী ভূমি কর্মকর্তা সৈয়দ ইব্রাহীম আহমেদ বলেন, বালু মহালের সীমানা অতিক্রম করে ইজারাদার কর্তৃক চরের ফসলি জমির মাটি কাটার বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে এবং শিগগিরই সার্ভে করে বালু মহালের সীমানা নির্ধারণ করে দেওয়া হবে। যদিও এবিষযে আশুগঞ্জের এসিল্যান কিছুই জানেন না।উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তাও ফোনে সাড়া দেননি।
তবে বালু মহালের ইজারাদার মেসার্স মৌসুমী ড্রেজিং সার্ভিসের স্বত্বাধিকারী মোশারফ হোসেন মিন্টু বলেন, আমরা ড্রেজারগুলোকে আমাদের নির্ধারিত সীমানার মধ্যে থাকার নির্দেশ দিয়েছি। সরকারকে রাজস্ব দিয়ে ইজারা নিয়েছি।
তেপান্তরে প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
Copyright © 2023 তেপান্তর | Design & Developed By: ZamZam Graphics