Tepantor

লেবাননে প্রবাসী নারী কর্মীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার

১১ মে, ২০২০ : ১২:২৪ পূর্বাহ্ণ

মনির হোসেন রাসেল,লেবানন: লেবাননে হামিদা বেগম নামে এক বাংলাদেশি নারীকর্মীর অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। শনিবার (৯ মে) দিবাগত রাতে রাজধানী বৈরুতের নাভা এলাকায় তার শয়নকক্ষে ওড়না প্যাঁচিয়ে গলায় ফাঁস দেওয়া অবস্থায় ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। হামিদার বাড়ি ফিরোজপুর জেলায়।

এ সময় হামিদা বেগমের শিশুপুত্র (কাজল) বিছানায় ঘুমন্ত অবস্থায় ছিল। আর স্বামী পলাতক। তাই এটি আত্মহত্যা, নাকি হত্যাকাণ্ড তা এখনও নিশ্চিত হতে পারেনি দেশটির পুলিশ। আসল রহস্য বের করতে জোর তদন্ত চালাচ্ছে প্রশাসন। প্রাথমিকভাবে পারিবারিক কলহের জের ধরেই এই অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটেছে বলে স্থানীয় প্রবাসী বাংলাদেশিরা ধারণা করছে।

প্রতিবেশী এক বাংলাদেশী জানান, স্বামী-স্ত্রী মাঝে ঝগড়া-বিবাদ প্রায়ই লেগে থাকত, হতে পারে পারিবারিক কলহের কারণে এ ঘটনা ঘটেছে।

অারো এক প্রতিবেশি প্রবাসী বাংলাদেশি জানায়, কিশোরগঞ্জ জেলার সুমন ও পিরোজপুর জেলার হামিদা বেগম দু’জনেই লেবানন প্রবাসী। কয়েক বছর আগে তারা উভয়েই বৈধভাবে লেবানন আসেন। পরিচয় থেকে ভালোবাসা। পরে বিয়ে করলে গত বছর তাদের কোলজুড়ে আসে একটি ফুটফুটে ছেলে সন্তান। সুমন প্রতিনিয়ত জুয়া, মদ্যপানসহ বিভিন্ন অনৈতিক কাজে যুক্ত ছিল। রাতের পর রাত অর্থের বিনিময়ে বাইরে জুয়া খেলতো।

তিনি জানান, অর্থের জন্য প্রায়ই হামিদাকে শারীরিকভাবে প্রহার করতো। ঘটনার ২ দিন আগেও সুমন তার স্ত্রী হামিদাকে অর্থের জন্য চাপ দিচ্ছিল। অর্থ না পেয়ে কাজলকে মারধর করলে নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে নিজের ওড়না গলায় প্যাঁচিয়ে আত্মহত্যা করে। আবার মারধরে মৃত্যু হলে আত্মহত্যা ঘটনার সাজানো চেষ্টা করা হয়েছে কিনা তাও দেখা দেখছে পুলিশ। ঘটনার পরে স্বামী সুমন বর্তমানে পলাতক রয়েছে।

স্থানীয় বাংলাদেশিরা পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ রোববার সকালে মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য নিয়ে যায়। এই ঘটনায় নাভা এলাকায় বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের মাঝে আতংক ছড়িয়ে পড়ে। অনেকেই পুলিশের ভয়ে এলাকা ছেড়ে অন্যত্র পালিয়ে যায়।

এদিকে নাভা এলাকায় বসবাসরত কয়েকজন প্রবাসী বাংলাদেশি জানায়, এলাকাটিতে প্রায় কয়েক হাজার বাংলাদেশির বসবাস। বেশিরভাগই অবৈধ। বাংলাদেশিদের পাশাপাশি সিরিয়ান, মিশরীয়, সুদানী, ইথিওপিয়া, ফিলিপাইন, ভারতসহ আরো কয়েকটি দেশের প্রবাসীরা অল্প টাকায় এই ব্যস্ততম এলাকাটিতে বাস করে।

বিগত কয়েক বছর ধরে এখানে প্রবাসী বাংলাদেশিরা পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে জুয়া, মদ ও দেহ ব্যবসার আখড়া গড়ে তুলেছে। এসব অনৈতিক কর্মকান্ডকে কেন্দ্র করে বিগত বছরগুলোতে বাংলাদেশিদের দ্বারা কয়েকটি হত্যাকান্ড এখানে সংঘটিত হয়। এ ধরনের ঘটনায় স্থানীয় লেবানিজ ও প্রশাসনের নিকট বাংলাদেশিদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে বলে নাভা এলাকায় বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিরা জানিয়েছেন। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ দূতাবাসকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে তারা অনুরোধ জানিয়েছেন।

বাংলাদেশ দূতাবাস সুত্র জানা যায়, লেবানন পুলিশ এ ব্যাপারে পর্যাপ্ত আলামত সংগ্রহ করেছে এবং তদন্ত অব্যাহত রয়েছে। লেবাননে বর্তমানে এই দম্পতির এক বছরের একটি ছেলে সন্তান রয়েছে। দূতাবাস এ ঘটনার পুরো বিষয়ে অবগত রয়েছে এবং ছেলে বাচ্চাটিকে দূতাবাসের হেফাজতে রাখা হয়েছে।

Tepantor

তেপান্তরে প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।