Tepantor

ইউরোপের গ্রীসে শীতে সঙ্কটে অভিবাসন প্রত্যাশীরা

৩০ জানুয়ারি, ২০২২ : ৩:৩৯ অপরাহ্ণ

তেপান্তর রিপোর্ট: ইউরোপে অভিবাসনপ্রত্যাশী শরণার্থীরা তুর্কি হয়ে গ্রীসে ঢুকার পর সেখানে শীতে তাদের মরে যাওয়ার অবস্থা হচ্ছে। আশ্রয়ের আবেদন করার সুযোগ না পাওয়ায় গ্রিসের মূল ভখণ্ডে অনেক অভিবাসী ও শরণার্থীর মিলছে না রাষ্ট্রীয় কোনো সুবিধা৷ বরফ শীতল আবহাওয়ায় অনাহারে তাদের দিন কাটছে খোলা আকাশের নীচে৷

সাম্প্রতিক সময়ে গ্রিসের উপর দিয়ে বয়ে যায় তুষারঝড়৷ ভেঙ্গে পড়ে যোগাযোগ ব্যবস্থাও৷ এমন অবস্থায় যেসব অভিবাসীদের থাকার জায়গা নেই বা পর্যাপ্ত খাবারের সংস্থান নেই। ফলে তারা পড়েছেন সবচেয়ে বিপাকে৷

বেশ কিছু মানবিক সহায়তা সংস্থা এই পরিস্থিতিতে অভিবাসী ও শরণার্থীদের কম্বল, জামা-কাপড়, খাদ্য বিতরণ করে ঘাটতি মেটাতে চেষ্টা করে যাচ্ছে৷ তবে সেটি প্রয়োজনের তুলনায় যথেষ্ট নয় বলে উল্লেখ করছে জার্মানির সি-আই এর মতো সংস্থা৷

 

আরো পড়ুনস্পেনের দীপপূঞ্জে ২ বাংলাদেশি সহ ১৮ অভিবাসনপ্রত্যাশী নিখোজ

 

নতুন নিয়ম অনুযায়ী কোনো ব্যক্তি ঝুঁকিতে আছেন বিবেচিত না হলে তিনি গ্রিসের মূল ভূখণ্ড, ক্রিট বা রোডসে আশ্রয় আবেদন করতে পারবেন না, জানান মোবাইল ইনফো টিম (এমআইটি) নামের একটি সংস্থার অ্যাডভোকেসি ম্যানেজার করিন লিনেকার৷ ২০১৬ সাল থেকে তারা আশ্রয়প্রার্থীদের তথ্য ও অন্যান্য সহায়তা দিয়ে আসছে৷ কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই অভিবাসী, শরণার্থীদের সমস্যা সমাধানে তাদের আসলে তেমন কিছু করার থাকে না৷

লিনেকার জানান, আগের নিয়মে মূল ভূখণ্ডে প্রথম আশ্রয় আবেদনের ক্ষেত্রে প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে আশ্রয়প্রার্থীদের স্কাইপে সাক্ষাৎকার দিতে হতো৷ এখন স্কাইপে লাইনটি খোলা থাকলে আবেদনকারীদের বলা হচ্ছে তাদের ক্ষেত্রে এই প্রক্রিয়াটি আর প্রযোজ্য নয়৷ এর বাইরে আর কোনো সহায়তা বা তথ্য তাদের দেয়া হচ্ছে না৷

ফাইল ছবি: গ্রিসের মালাকাসা শরণার্থী ক্যাম্পে বরফ নিয়ে খেলছে শিশুরা৷ ছবি: ইপিএ

এক্ষেত্রে কারো সামনে একমাত্র সুযোগ তিনি ঝুঁকিতে আছেন এমন প্রমাণ দেয়া৷ যেমন গুরুতর অসুস্থ, গর্ভবতী অথবা নির্যাতন, ধর্ষণের শিকার তাদেরকে এমন ‘পুলিশ নোট’ দাখিল করতে হয়৷ এর মানে গ্রিক কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে পরিচয় পরীক্ষার পরই তিনি এই আশ্রয় কার্যালয়ে আবেদন করতে পারবেন৷ লিনেকার বলেন, তার জানামতে মাত্র একজন এই চেষ্টাটি করেছিলেন, যদিও সফল হতে পারেননি৷ ‘‘তারা দিনের পর দিন ঘুরতে থাকে, কিন্তু অফিস ভবনে ঢোকার সুযোগ পায় না,’’ বলেন তিনি৷

ওয়েভ নামের একটি সংস্থা অভিবাসীদের খাদ্য, কাপড়, স্লিপিং ব্যাগ এবং কম্বল সরবরাহ করে৷ তারা জানান, তাদের সহায়তাপ্রার্থীদের তালিকা ক্রমশ লম্বা হচ্ছে৷ ‘‘এই মানুষগুলোর পরনে অনেক সময়ই থাকে খুব পাতলা জ্যাকেট, ভ্রমণকালে ছিঁড়ে যাওয়া জুতা৷ তাদের নেই কোনো কম্বল৷ এটাই একমাত্র সেবা যা তারা পাচ্ছে৷ এটা সত্যিই হতাশাজনক পরিস্থিতি৷’’

এমন অবস্থায় রাষ্ট্রীয় কোন বন্দোবস্ত না থাকায় তাদের ঘুমাতে হয় যেখানে সেখানে৷ অনেক সময় তারা পুলিশের কাছে ধরা পড়েন, জেলবন্দি হন বা তুরস্কেও তাদের ফেরত পাঠানো হয় বলে জানান লিনেকার৷

নভেম্বরে গ্রিক সরকার ঘোষণা দিয়েছিল, মূল ভূখণ্ডে নতুন দুইটি আশ্রয়শিবির খোলা হবে৷ কিন্তু এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে আর কোনো তথ্য জানা যায়নি৷ বর্তমানে শুধু এভ্রোস অঞ্চলে ফিলাকিও কেন্দ্রটিই অভিবাসীদের প্রাথমিক আশ্রয়কেন্দ্র৷ তবে সেখানে চাইলেই যে কেউ জায়গা পান না৷

সরকারের এই ব্যবস্থাপনার কারণে মূল ভূখণ্ডে ক্রমশ আশ্রয়প্রার্থীদের আবেদনের চাপ বাড়ছে৷ লিনেকারের গবেষণা অনুযায়ী, গত বছর প্রথমবারের মতো সমুদ্রপথের চেয়ে স্থলপথে বেশি মানুষ গ্রিসে প্রবেশ করেছেন৷

 

এসকে

 

Tepantor

তেপান্তরে প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।