Tepantor

সরাইলে নদীর পাশে মাটি ভরাট করে আশ্রয়ণ প্রকল্প

২১ ডিসেম্বর, ২০২০ : ১:১১ অপরাহ্ণ

তেপান্তর রিপোর্ট; ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে হাওর এলাকায় নদী সংলগ্ন ১০ফুট গভীর নিচু ভূমি ভরাট করে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের গৃহ নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। ফলে ১৭লাখ টাকার গৃহ নির্মাণ কাজের জায়গা প্রস্তত করতে ব্যয় হচ্ছে ৩৪লাখ টাকা। এমন ব্যয় মিটানোর কোন নির্দেশনাও নেই প্রকল্পের নীতিমালায়। এই জায়গা বর্ষায় বিলীন হয়ে যাওয়ার শঙ্কায় করছেন স্থানীয়রা।

উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে বিশেষ বরাদ্দে নির্মিতব্য এসব গৃহ পাবে ভূমিহীন ও গৃহহীন দরিদ্র শ্রেণির মানুষ। সারা দেশের ন্যায় সরাইলেও ভূমিহীন ও গৃহহীন ১০২টি পরিবারকে এ প্রকল্পের আওতায় গৃহ নির্মাণ করে দেওয়া হবে। ইতিমধ্যে তালিকাও প্রণয়ন করা হয়েছে। চলছে স্থান নির্ধারণ ও গৃহ নির্মাণের প্রক্রিয়া।
২০২১ সালে জানুয়ারি মাসের মধ্যে এ প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন করার নির্দেশনা রয়েছে। উপজেলার নোয়াগাঁও ইউনিয়নের নোয়াগাঁও গ্রামের দক্ষিণে হাওরে লাহুর নদী সংলগ্ন ১০ফুট গভীর নীচু জায়গা খননযন্ত্র দিয়ে ভরাটের কাজ চলমান রয়েছে। ৩০শতাংশ খাসভূমিটি ভরাটের জন্য লাহুর নদীর তলদেশ থেকে মাটি আনা হচ্ছে। নোয়াগাঁও গ্রামের মাঞ্জু মিয়া ৬ লাখ টাকার চুক্তিতে মাটি ভরাটের কাজটি করছেন।

উপজেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, ওই জায়গায় ১০টি পরিবারকে পুনর্বাসন করা হবে। প্রত্যেক পরিবারের জন্য দুই শতাংশ জমির মধ্যে ৩৯৪ বর্গফুট আয়তনের দুই কক্ষের একটি সেমিপাকা গৃহ নির্মাণ করা হবে। সাথে থাকবে একটি টয়লেট ও একটি রান্নাঘর। প্রতিটি গৃহের নির্মাণ ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে এক লাখ ৭১হাজার টাকা। এখানে দশটি গৃহ নির্মাণের ব্যয় হবে ১৭ লক্ষ ১০ হাজার টাকা।

উপজেলা প্রকৌশলী (ভারপ্রাপ্ত) নিলুফা ইয়াছমীন জানান, নদী ভাঙ্গন থেকে ওই গৃহগুলোকে রক্ষা করতে প্রতিরক্ষা দেওয়াল নির্মাণ করতে হবে। এর জন্য ব্যয় হবে ২৮ লাখ ৫ হাজার টাকা। স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি অভিযোগ করে বলেন, হাওর এলাকায় এত গভীর জায়গা নতুন মাটিতে আশ্রয়ণ প্রকল্পের গৃহ নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া মোটেও ঠিক হয়নি। কারণ গৃহনির্মাণ ব্যয়ের দ্বিগুণ ব্যয় করতে হবে মাটি ভরাট ও প্রতিরক্ষার জন্য। হতদরিদ্র পরিবারগুলোর সেখানে বসবাস করা কষ্টসাধ্য হবে। কারণ সেখানে বিদ্যুুৎ ও বিশুদ্ধ পানির কোন ব্যবস্থা নেই। তাদের নেই নিরপত্তা ব্যবস্থা। এ ছাড়া স্বল্প ব্যয়ে নতুন মাটিতে নির্মিতব্য এসব গৃহের স্থায়ীত্ব নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে।

এ প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, প্রকল্পের জন্য এমন কোনো জায়গা নির্ধারণ করা যাবে না যেখানে নতুন করে সামান্য পরিমাণ মাটি ফেলতে হবে এমন নির্দেশনা রয়েছে।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) সাইফুল ইসলাম রয়েছেন গৃহ নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য সচিবের দায়িত্বে। তিনি বলেন, স্থান নির্ধারণের বিষয়টি আমাদের নয়, আমরা শুধু গৃহ নির্মাণের কাজের সঙ্গে যুক্ত।

প্রকল্পের স্থান নির্বাচন ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির প্রধান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আরিফুল ইসলাম মৃদুল বলেন, ওই ইউনিয়নে আর কোনো খাসজমি না থাকায় হাওর এলাকাকেই বেচে নিতে হয়েছে। মাটি ভরাট শেষে সেখানে প্রতিরক্ষা দেওয়াল নির্মাণ করে গৃহ নির্মাণ করা হবে।

উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রফিক উদ্দিন ঠাকুর বলেন, স্থান নির্ধারণ থেকে শুরু করে পুরো প্রকল্প বাস্তবায়ন করছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। তাঁরা কেন হাওরের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ এ প্রকল্পের স্থান নির্ধারণ করছেন তারাই ভালো জানেন। আমার কাছে উপজেলা পরিষদের তহবিল থেকে প্রতিরক্ষার জন্য অর্থ বরাদ্দ চেয়েছেন আমি পাঁচ লাখ টাকা দিতে সম্মতি দিয়েছি। কিন্তু দেওয়ালের জন্য ৩০লাখ টাকার প্রয়োজন। তা না হলে আমি শতভাগ নিশ্চিত হাওরের পানি আঘাতে গৃহগুলো স্বল্পদিনের মধ্যেই বিলীন হয়ে যাবে।

Tepantor

তেপান্তরে প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।