Tepantor

ঈদের দিনে কোটি টাকার মাদক সেবন ৩ উপজেলায়

১৫ এপ্রিল, ২০২৪ : ৯:৪০ অপরাহ্ণ

তেপান্তর রিপোর্ট: এবারের ঈদুল ফিতরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার ভারত সীমান্তবর্তী আখাউড়া, বিজয়নগর, ও কসবা উপজেলায় কোটি টাকার মাদক কেনাবেচা ও সেবন করা হয়েছে। প্রতি বছর ঈদকে কেন্দ্র করে ভারতীয় মাদক ফেন্সিডিল, স্কফ,বিয়ার, ও ইয়াবা সেবন ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আলাদা এক উৎসবে পরিণত হয়েছে। বেশ কয়েকজন মাদকের ডিলার ও ব্যবসায়ীদের দেয়া তথ্য ও প্রতিবেদকের ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী ঈদের দিন প্রায় দুই কোটি টাকার মাদক সেবনের উদ্দেশ্যে বেচাকেনা হয়েছে।

অনুসন্ধান বলছে, সদরসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে হাজার হাজার লোক ঈদের দিন বাড়তি আনন্দের জন্য মাদক সেবনের উদ্দেশ্যে বিজয়নগর, আখাউড়া, ও কসবা উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকায় পাড়ি জমিয়েছে। এছাড়া পার্শ্ববর্তী কুমিল্লা জেলার ব্রাহ্মণপাড়া ও দেবিদ্বার উপজেলার একাংশের কয়েকশ লোক,কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরব উপজেলা থেকে এবং নরসিংদী থেকে কয়েকশত লোক ঈদের দিন মাদক সেবনের উদ্দেশ্যে জেলার এ তিন উপজেলায় পাড়ি জমিয়েছে।

বিজয়নগর, আখাউড়া, ও কসবা উপজেলায় ভারতীয় মাদক স্কফ সেবনের জন্য বেচাকেনা হয়েছে প্রায় বারো থেকে পনের হাজার পিস। ভারতীয় মদ বিয়ার বেচাকেনা হয়েছে প্রায় পনেরশো থেকে দুই হাজার পিস,ফেন্সিডিল বেচাকেনা হয়েছে প্রায় এক থেকে দেড় হাজার পিস, এবং ইয়াবা বেচাকেনা হয়েছে প্রায় চার থেকে পাচ হাজার পিস।

ঈদের দিন প্রত্যেক পিস স্কফ নূন্যতম একহাজার,বিয়ার নূন্যতম ছয়শত, ফেন্সিডিল নূন্যতম চব্বিশশত,এবং ইয়াবা নূন্যতম দুইশত টাকায় বিক্রি হয়েছে।

সর্বনিম্ন সংখ্যায় নূন্যতম মূল্যে স্কফ বেচাকেনা হয়েছে এক কোটি বিশ লাখ টাকার (১২০০০ ★ ১০০০/-), বিয়ার বেচাকেনা হয়েছে নয় লাখ টাকার (১৫০০ ★ ৬০০/-),ফেন্সিডিল বেচাকেনা হয়েছে চব্বিশ লাখ টাকার (১০০০ ★ ২৪০০/-), ইয়াবা বেচাকেনা হয়েছে আট লাখ টাকার (৪০০০ ★ ২০০/-)। মোট এক কোটি একষট্টি লাখ টাকার মাদক সেবনের উদ্দেশ্যে বেচাকেনা হয়েছে। ধারণা করা যায় ঈদের দিন প্রায় দুই কোটি টাকার মাদক সেবনের উদ্দেশ্যে বেচাকেনা হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দশের অধিক মাদক মামলার আসামি বিজয়নগর উপজেলার মাদক ব্যবসায়ী রাশেদ (ছদ্মনাম) বলেন, প্রত্যেক বছর ঈদ এলে এরকম বেচাকেনা হয়। জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লোকজন আসে,এমনকি ভৈরব ও নরসিংদী থেকেও শত শত লোক আসে নেশা করার জন্য। এবারের ঈদে আমি ৪৫০ স্কফ,১০০ ফেন্সিডিল, ১০০ বিয়ার, ও ২০০ ইয়াবা বিক্রি করেছি।

তিনি আরও জানান, আমাকে যে ডিলার স্কফ, ফেন্সি দেয় সে ইদের দিন উপলক্ষে আড়াই হাজার স্কফ দিয়েছে বিভিন্ন ব্যবসায়ীকে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পাচের অধিক মাদক মামলার আসামি বিজয়নগর উপজেলার মাদক ব্যবসায়ী রাবেয়া (ছদ্মনাম) বলেন, এবার ঈদে শুধু স্কফ বিক্রি করেছি ৬৫০। আমাদের সামনের গ্রামের একজন ডিলার আছে সে প্রায় তিন হাজার বিক্রি করেছে।

আখাউড়া উপজেলার মাদক ব্যবসায়ী রাজু (ছদ্মনাম) জানান,ঈদের দিন ফেন্সি, স্কফ মিলে ৫৫০ বিক্রি করেছি। পরেরদিন আবার কমে ২০০ বিক্রি হয়েছে।
তিনি আরও জানান, প্রতি ঈদেই এমন জমজমাট ব্যবসা হয়। জেলার অনেক নামি-দামি লোক এদিন বিভিন্ন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ফেন্সি,স্কফ কিনে খায়। একটু বাড়তি আনন্দ করতেই ইদের দিন লোক বেশি আসে।

কসবা উপজেলার মাদক ব্যবসায়ী আমিন(ছদ্মনাম) বলেন, এবার ঈদে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহর থেকে কসবা উপজেলায় লোক কম আসছে। তারপরও অনেক ভাল বেচাকেনা হয়েছে। আমি ঈদের দিন প্রায় ৩০০ ফেন্সি, স্কফ,ও বিয়ার বিক্রি করেছি।

বিশিষ্টজন ও সচেতন মহলের অভিমত, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় মাদকের ভয়াবহ বিস্তার ঘটেছে। ঈদকে কেন্দ্র করে মাদক সেবনের একটা বাজে সংস্কৃতি গড়ে উঠছে,এ থেকে জেলাবাসীকে রক্ষা করতে হবে। ঈদের দিন কোটি টাকার মাদক সেবন প্রমাণ করে বিজিবি, পুলিশ, র‍্যাব,ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্টদের মাদক নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূলে অবস্থান যথেষ্ট নয়।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সহকারী পরিচালক মিজানুর রহমানের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি।

বিজয়নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আসাদুল ইসলাম বলেন, আমরা নিয়মিত চেকপোস্ট বসাচ্ছি। মাদকের বিরুদ্ধে আমাদের জিরো টলারেন্স নীতি অব্যাহত রয়েছে। ঈদের দিনে এরকম মাদক বেচাকেনার কোন তথ্য আমার জানা নেই।

Tepantor

তেপান্তরে প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।