Tepantor

ছাত্রলীগ কর্মীর ইটের আঘাতে অন্ধ হলো শিশুর চোখ, মামলা নেয়নি পুলিশ

২৩ এপ্রিল, ২০২৪ : ৮:৪১ অপরাহ্ণ

তেপান্তর রিপোর্ট: ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদরের মাছিহাতা ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি দিপুর ইটের আঘাতে এক শিশুর চোখ অন্ধ হয়ে গেছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার চাপুইর গ্রামে জায়গা ক্রয় বিক্রয় নিয়ে ঝগড়ায় এই ঘটনা ঘটে। এঘটনায় সদর মডেল থানায় একটি অভিযোগ দেয়া হলেও মামলা রুজু করেনি পুলিশ,বাধ্য হয়ে আদালতে মামলা দায়ের করেছে ভুক্তভোগী পরিবার। অন্ধ হয়ে যাওয়া শিশুটির নাম মিজান (৫ বছর), সে চাপুইর গ্রামের ফখরুদ্দিনের ছেলে।

জানা যায়, চাপুইর গ্রামের মৃত মাহফুজ ভূইয়ার ছেলে মোখলেছুর রহমানের কাছ থেকে প্রায় একমাস পূর্বে ৪.৫ শতক জায়গা ক্রয় করেন তারই প্রতিবেশী ফখরুদ্দিন। গত ৩’ই এপ্রিল জায়গায় মাটি ভরাট করে বাড়ি তৈরী করতে গেলে বিক্রয়কারী মোখলেস জানান পাশের সরকারি রাস্তার জায়গাসহ ৪.৫ শতক জায়গা ফখরুদ্দিন এর কাছে বিক্রি করেছেন। এনিয়ে ফখরুদ্দিনের সাথে মোখলেসের বিতর্কের একপর্যায়ে মোখলেস এর বড় ছেলে দিপু এবং ছোট ছেলে অপুসহ কয়েকজন ফখরুদ্দিনের উপর হামলা করে। হামলায় ফখরুদ্দিনের সাথে থাকা তার ৫ বছরের শিশু সন্তান মিজানের ডান চোখ দিপুর ইটের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরবর্তীতে শিশু মিজানকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর জেনারেল হাসপাতাল এবং সেখান থেকে জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইন্সটিটিউটে তাৎক্ষণিক চিকিৎসার জন্য নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক প্রয়োজনীয় পরীক্ষা নীরিক্ষা করে জানান তার ডান চোখটি দৃষ্টিহীন হয়ে গেছে। এঘটনায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানায় অভিযোগ দেয়া হলেও অদৃশ্য কারণে মামলা নেয়নি পুলিশ। ঘটনার ১২ দিনেও থানায় মামলা করতে না পেরে বাধ্য হয়ে আদালতে মামলা দায়ের করেছেন দৃষ্টিহীন হওয়া শিশু মিজানের পিতা ফখরুদ্দিন।

শিশু মিজানের পিতা ফখরুদ্দিন বলেন, আমি মোখলেস মিয়ার কাছ থেকে সরকারি রাস্তার জায়গা বাদে সাড়ে চারশতক জায়গা ক্রয় করি। কিন্তু তিনি এখন বলছেন সরকারি রাস্তার জায়গাসহ আমার কাছে জায়গা বিক্রি করছেন। এনিয়ে উনার সাথে তর্কবিতর্কের সময় মোখলেস এর বড় ছেলে দিপু আমার উপর হামলা করে মারধর করতে থাকে। তার সাথে সাথে দিপুর ছোট ভাই অপুসহ মফিজ,জসিম ও আরও ৩-৪ জন দৌড়ে এসে মারধর করতে থাকে। আমার সাথে থাকা শিশু সন্তান মিজানের চোখে দিপুর মারা ইটের আঘাত লাগলে চোখটি নষ্ট হয়ে যায়। ডাক্তার বলছে সে আর ডান চোখে দেখতে পাবে না। আমি এর বিচার চাই। থানায় অভিযোগ দিলেও পুলিশ কোন মামলা নেয়নি। আমি বাধ্য হয়ে আদালতে গিয়েছি।

তিনি আরও জানান, মোখলেস এর ছেলে দিপু ছাত্রলীগের রাজনীতিতে জড়িয়ে সন্ত্রাসে পরিণত হয়েছে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই। কিছুদিন আগেও সে একজনকে অপহরণ করে কবরস্থানের এখানে আটকে রেখেছিল বলে অভিযোগ। সে একজন মাদকসেবী।

মোখলেস ও ফখরুদ্দিনের প্রতিবেশী জামাল ভূইয়া বলেন, মোখলেস ও তার ছেলে দিপু মানুষকে অত্যাচার করে। দিপু সন্ত্রাস হয়ে গেছে। তাদের বিরুদ্ধে আমিও থানায় জিডি করে রাখছি।

ফখরুদ্দিনের চাচা আনিছ ভূইয়া বলেন, মোখলেস রাস্তার জায়গা ছাড়া ফখরুদ্দিনের কাছে জায়গা বিক্রি করেছে, কিন্তু এখন ঝামেলা করতেছে। সে এবং তার ছেলেরা মিলে ফখরুদ্দিনকে মারধর করেছে,আমি ফেরাতে গেলে আমাকেও মারধর করা হয়েছে। শিশু মিজানের চোখটি নষ্ট করে ফেলেছে। আমারা এর বিচার চাই।

তিনি আরও জানান, মোখলেস ঢাকা টিএন্ডটি’তে সরকারি চাকরি করে। কিন্তু সবসময় বাড়িতেই থাকে। মাস শেষে বেতন উঠাইয়া নিয়ে আসে। একজন সরকারি চাকরিজীবি অফিস না করে কিভাবে বেতন আনে আমরা সরকার ও প্রশাসনের কাছে জানতে চাই। আর তার ছেলে দিপু সন্ত্রাস হয়ে গেছে, আপনারা গ্রামে তদন্ত করে দেখতে পারেন।

এসব বিষয়ে জানতে মোখলেস ভূইয়ার বাড়িতে গেলে তিনি এবং তার সন্তানেরা কোন বক্তব্য দিতে রাজি হয়নি।

সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আসলাম হোসেন বলেন, অভিযোগটি কার কাছে ছিলো দেখতে হবে।

Tepantor

তেপান্তরে প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।