Tepantor

আইন সব বিষয়ে খাটানো যাবেনা: আইন অমান্যকারীদের পক্ষে এসিল্যান্ডের সাফাই

১৭ জানুয়ারি, ২০২৪ : ৮:০৭ অপরাহ্ণ

তেপান্তর রিপোর্ট: কৃষিজমি সুরক্ষা আইন-২০১৬ (খসড়া)এর ৪(১) ধারায় বলা আছে, “কৃষিজমি কোনোভাবেই তার ব্যবহারভিত্তিক শ্রেণি পরিবর্তন করা যাবে না”। এই আইন লঙ্ঘন বা অমান্য করলে তার শাস্তি হিসেবে ধারা ৭ এর (১)এ বলা হয়েছে, “কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান যেই হোক না কেন, তিনি বা প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী ব্যক্তিবর্গ কিংবা তাঁহার/তাঁহাদের সহায়তা প্রদানকারী কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাগণ সর্বোচ্চ ০৩(তিন) বছরের সশ্রম কারাদন্ড বা সর্বনিম্ন ০৩ (তিন) লক্ষ টাকা পর্যন্ত অর্থদন্ড অথবা উভয় দন্ডে দন্ডিত হইবেন এবং বর্ণিত কৃষি জমি সরকার কর্তৃক বাজেয়াপ্ত করা হইবে। কিন্তু এই আইনের তোয়াক্কা না করে উলটো অপরাধীদের পক্ষে সাফাই গেয়েছেন আশুগঞ্জের এসিল্যান্ড কাজী তাহমিনা সারমিন।

আশুগঞ্জের শরীফপুর গ্রামে ফসলি জমি কেটে দেদারসে পুকুর বানানোর বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কিনা এবিষয়ে জানতে ১৬ জানুয়ারি এক সাংবাদিক এসিল্যান্ডকে ফোন করলে তিনি বক্তব্য দিতে গিয়ে সাংবাদিককে বলেছেন, “আপনার মতো আরেকজন সাংবাদিক বিষয়টি ফোন করে আমাকে জানালেন। তো আপনারা যেভাবে বলছেন, আমিতো আমার নয়েবকে পাঠিয়েছিলাম, আপনারা যেভাবে বলছেন ৭/৮টা পুকুর কেটেছে সেরকম তো না। আর যারা করছে (পুকুর বানাচ্ছে) সেটা তো কোন ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল পারপাসে করছেনা। ওখান থেকে মাটি বিক্রিও করছেনা। আমাকে যেটা জানালো (নায়েব) ওখানে আশপাশে পুকুরের পাড় বাধছে। আর পুকুরটাকে একটু গভীর ভাবে খনন করছে। আর হলো যেই জমিতে ফসল হয়না সেটাকে পুকুর বানাচ্ছে মাছ চাষের জন্য। তারপরও উনাদের বলেছি যদি তারা শ্রেণি পরিবর্তন করতে চান তাহলে একটি অনুমতির ব্যাপার আছে, উনাদেরকে আবেদন করতে হবে।”

শ্রেণি পরিবর্তনের আবেদনের আগেই জমির মালিক তা পরিবর্তন করতে পারে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, “দেখুন আইনতো সব বিষয়ে খাটানো যাবেনা। একজন মানুষের এখন যেহেতু জনসংখ্যা বাড়ছে জমি চেঞ্জ করে একটা কিছু করা লাগতেই পারে। সব জায়গায় তো আর বাধা দেওয়া যায়না। সব জায়গায় জরিমানাও করা যায় না। এখন পরিস্থিতি বুঝে যদি ব্যবস্থা নেওয়ার প্রয়োজন হয় নেবো নাহলে উনাদের যেটা করার প্রয়োজন উনারা করবেন”।

এবিষয়ে ঘটনাটি সরেজমিন তদন্তকারী সাংবাদিক সাপ্তাহিক সাকিয়াতের স্টাফ রিপোর্টার কাজী আশরাফুল ইসলাম বলেন, আশুগঞ্জের এসিল্যান্ড তার বক্তব্যে ভুল তথ্য দিয়েছেন, তিনি আইন অমান্যকারীদের পক্ষে সাফাই গেয়েছেন। কেননা, সংশ্লিষ্ট বিষয়ে প্রকাশিত আগের প্রতিবেদনটিতে নতুন ৫টি পুকুর খনন করার কথা বলা হয়েছে । এছাড়াও নতুন আরেকটি পুকুর খনন করার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে। সেই হিসেবে ৫/৬টি পুকুর খনন হচ্ছে বা হয়েছে। এর মধ্যে কেবল একটি পুকুর আগে ছোট ডুবা ছিল যেটিকে এখন আশপাশের জমি কেটে বড় পুকুরে রুপান্তর করা হয়েছে। আর বাকি পুকুর গুলো একেবারে খাটি কৃষি জমি। ওই জমিগুলোর আশপাশের জমিতে স্বাভাবিক ভাবেই ফসল হচ্ছে। তাহলে এসিল্যান্ড কীভাবে বললেন, “যেই জমিতে ফসল হয়না সেগুলোকে পুকুর বানাচ্ছে”? তাছাড়া এসিল্যান্ড একজন আইন প্রয়োগকারী ব্যক্তি। রাষ্ট্র তাকে আইন প্রয়োগ করার দায়িত্ব দিয়েছে। তা না করে তিনি কীভাবে বলতে পারেন যে, সব বিষয়ে আইন খাটানো যাবেনা।

তিনি পুকুর ভরাটকারীদের পক্ষে আরও বলেছেন যে, “ মানুষের প্রয়োজন পড়লে জমির ধরন চেঞ্জ করতেই পারে”। অথচ পুকুর খননকারী আউয়ালের জমিকে পুকুর বানানোর কোন প্রয়োজন নেই, কারণ তিনি দীর্ঘদিন যাবৎ প্রবাসে থেকে প্রচুর টাকা পয়সার মালিক হয়েছেন। তার ছোট দুইজন সন্তান রয়েছে এক ছেলে ও এক মেয়ে, তার বাড়িও রয়েছে। তার বাড়ির সাথেই তার নিজের একটি বড় পুকুর ও ডুবা রয়েছে, সেই সাথে অনেক জমিজমাও। এই অবস্থায় নতুন পুকুর কেটে মাছ চাষ করে তার সংসার চালতে হবেনা। প্রকৃত পক্ষে আওয়াল পুকুর খনন করেছেন মূলত বাণিজ্যিক ভাবে মাছ চাষ করতে ও অধিক মুনাফা করতে। এতে করে ফসলি জমি কমছে। এরপর এসিল্যান্ড যেভাবে বলেছেন যে, উনাদের জমির শ্রেণি পরিবর্তন করতে হলে আবেদন করতে হবে, এর মাধ্যমেও কি ফসলি জমি ধ্বংসকারীদের উৎসাহ দেওয়া হয়নি? এসিল্যন্ড কি সত্যিই ফসলি জমি রক্ষার পক্ষে? আগের নিউজে একটি অভিযোগের কথা বলা হয়েছে একজন সাংবাদিক ও কিছু রাজনৈতিক নেতার মাধ্যমে প্রশাসন ম্যানেজ করার কথা। তবে কি সেটিই সত্য?একজন এসিল্যান্ড এমন ভিত্তিহীন তথ্য দিয়ে মিডিয়াতে বক্তব্য দেওয়া খুবই হতাশাজনক ব্যাপার। তার এমন বক্তব্যে ফুটে উঠেছে তিনি কীভাবে বেআইনি কর্মকাÐের সমর্থন করছেন একই সাথে কীভাবে তিনি ফসলি জমি নষ্ট করে পুকুর তৈরি করতে মানুষকে এক প্রকার উৎসাহ দিচ্ছেন।

গত ১০ বছরে শুধু মাত্র এই এলাকায় পুকুর বানানোর ফলে ফসলি জমি কমেছে আশঙ্কাজনক হাড়ে, যা বর্তমানে নতুন ও পুড়াতন পুকুরের সংখ্যা দেখলেই বুঝা যায়। কিন্তু এত পুকুর তৈরি হওয়া স্বত্বেও প্রশাসন কখনোই এসবের বিরুদ্ধে ন্যূনতম ব্যবস্থা নেয়নি।

পুকুর ভরাটকারীদের পক্ষে এসিল্যান্ডের বক্তব্যের বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমানের সাথে যোগযোগ করা হয়েছিল, একই সাথে এসিল্যান্ডের বক্তব্যটি জেলা প্রশাসকের কাছে উপস্থাপন করা হয়েছিলো। এবিষয়ে তিনি বলেছেন, ব্যস্ততার কারনে বক্তব্যটি দেখা হয়নি, তবে তিনি আশুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শ্যামল চন্দ্র বসাককে নির্দেশ দিয়েছেন বিষয়টি দেখতে। জেলা প্রশাসক আরও জানিয়েছেন যে, এসিল্যান্ড সরেজমিনে গিয়ে পুকুর ভরাটের বিষয়টি দেখতে যাওয়ার কথা।
এবিষয়ে বক্তব্য জানতে আশুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শ্যামল চন্দ্র বসাককে ফোন করা হয়েছিলো, কিন্তু ফোনে সাড়া পাওয়া যায়নি।

Tepantor

তেপান্তরে প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।